নিহাদ হোসাইন
হে মানুষ(বাঙালি), আমি কখনো কুকুরকে দেখিনি স্বজাতিকে একেবারে নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য প্রাণঘাতী অস্ত্র তৈরি করতে, কিন্তু তোমাদের দেখিছি।
তোমাদের মধ্যে প্রচন্ড ধার্মিক কিংবা স্রষ্টাভীরু যে লোক তাকেও দেখেছি আমি, সুযোগ পেলেই স্ব- জাতি এমনকি সহোদরকেও অন্যায় ভাবে অত্যাচার করতে। মানুষ তো মানুষকে ভালোবাসার কথা ছিল, তাহলে কেন অন্যায় ভাবে অত্যাচার হয় মানুষ কর্তৃক মানুষের উপর?
তোমাদের সকল শাস্ত্র কিংবা ধর্ম তো বলে তোমরা সৃষ্টির সেরা। তবে তোমরা কি নিজেকে ক্ষমতাশালী কিংবা রাজত্ব গড়তে তোমাদের শাস্ত্রের বিরোধিতা করছো?
হে মানুষ, তোমরা কি জানো তোমার মতো শারিরীক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অন্য কোনো মনুষ্যজীব আজ মনে মনে স্রষ্টার কাছে আকুতি করে পরজন্মে কিংবা পরকালে পশু হয়ে জন্মানোর। কারণ তোমাদের সমাজে অন্যায় ভাবে ধনী হওয়া ব্যক্তিদের পোষা পশু গুলোর তিনবেলার খাবারেও এখন বিফ কিংবা চিকেন থাকে। তোমরা শখ করে পশুদের হাজার হাজার অর্থব্যয়ে পালন করছো। অথচ সৃষ্টির সেরা জীবেরা পথে অবহেলিত পড়ে থাকে। তোমরা তাদের দশ টাকা দিতেও কত সংকোচ বোধ করো!
তোমরা না কত নীতি, কত তত্ত্ব, কত দর্শনচিন্তা জানো?
তাহলে তোমাদের তত্ত্ব, নীতি কিংবা দর্শনচিন্তা কি ব্যাখাতেই কেবল সীমাবদ্ধ? বাস্তবে মানুষের পক্ষে কি তাদের কোনো এক্টিভিটি নেই?
তোমরা মানুষরাই তো বলো সমাজনীতি কিংবা Socialism এর কথা। তোমরাই তো বলো সকল মানুষের সমান অধিকার, সকল মানুষই সমান। তবে তোমাদের চলার পথে কেন ভিআইপি মুভমেন্ট প্রয়োজন হবে? কেন সৃষ্টির সেরা মানুষেরা অসহায়ের মতো ফুটপাতে পড়ে থাকবে? কেন তারা পরিত্যক্ত কুকুরদের মতো ডাস্ট থেকে খাবার কুড়িয়ে খাবে? এটাই কি তোমাদের সমাজনীতি?
তোমরা কি ধার্মিক আর স্রষ্টাভীরু বাহ! লক্ষ লক্ষ টাকায় তোমরা গড়ে তোলো মসজিদ-মন্দির অথচ তোমাদের এলাকায় কত মানুষ পড়ে আছে না খেয়ে, কত অসহায় বাবা অর্থকষ্টের দরুন বিয়ে দিতে পারছে না তার মেয়েকে। তোমরাই বলো মসজিদ কিংবা মন্দিরে লোকেরা যায় না। যেখানে তোমরাই বলো জীবন বাঁচানো ফরজ কিংবা আগে কর্ম পরে ধর্ম। সেখানে মানুষ ধর্ম পালন করবে কিভাবে? যেখানে তাদের বেঁচে থাকার ধর্মই বড় হয়ে উঠে?
তোমাদের আজ ইট পাথরের মসজিদ – মন্দির গুলো অন্ধ করে দিয়েছে পুরোপুরি। তোমরা স্রষ্টাকে খুঁজতে ধর্মীয় লেবাস ধরে যাও প্রার্থনালয়ে। অথচ স্রষ্টা বলেছেন জীবসেবা মানেই স্রষ্টাকে পাওয়া।
তোমরাই বলো দেশে অন্যায় কিংবা অরাজকতা বাড়ছে। কিন্তু তোমরা কি জানো এসব অরাজকতার মূল কারণ তোমরা? যখন একজন অসহায় লোক তোমাদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে তখন তোমরা দূর দূর করে তাড়িয়ে দাও। আর যখনই তারা জীবন ও জীবিকার তাগিদে কোনো অন্যায় করে ফেলে তখনই তোমরা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠো। তোমরা তখন সুশীল সমাজ হয়ে যাও। এবার আসি তোমাদের রাজনীতির কথায়, অন্যান্য দেশের লোকজন যখন মানুষ হতে ব্যস্ত,তখন তোমাদের দেশের মানুষ নেতা হতে ব্যস্ত। তোমরা নেতা হওয়ার জন্য সিনিয়র নেতাকে বাপ পর্যন্ত ডাকতে সংকোচবোধ করো না। তোমরা রাজনীতি নিয়ে একে অপরকে মেরে পর্যন্ত ফেলাে।তোমরা রাজনীতির নামে অর্থ পাচার, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ইত্যাদি করো। যার বলি হয় দেশের সাধারণ জনতা।
অন্য দেশগুলোর স্বপ্নবাজ তরুনরা যখন স্বপ্ন দেখে ইঞ্জিনিয়ার, গবেষক, ডাক্তার, ফিলোসোফার, দার্শনিক, লেখক হওয়ার। সেখানে তোমাদের দেশের তরুণেরা স্বপ্ন দেখে রাজনৈতিক একটা পদ পেয়ে চাঁদাবাজি করার। তোমরাই তরুণদের আজ ব্যবহার করছো তোমাদের হাতিয়ার হিসেবে। পাপের প্রতিফল তোমরা যখন পেতে শুরু করো এবং দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাও তখন তোমাদের নামে স্লোগান দেওয়া তরুণরা অসহায় হয়ে পড়ে, যেমন মা তার সন্তানকে ছেড়ে চলে গেলে হয়। বিরোধী দলের লোকেদের তাড়া এবং মামলা হামলা খেয়ে নাস্তানাবুদ অবস্থা হয়ে যায়। তোমরাই আজ তরুনদের হাতে কলমের পরিবর্তে অস্ত্র তুলে দিচ্ছো তোমাদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য।
তারপরেও বলো কিভাবে বলি মানুষ তোমাদের?