শিশির রাজন:
বনের গভীরে ভাঙা এক কুটিরে বাস করতো এক ভয়ংকর ডাইনী নাম তার নীলমণি।
নীলমণি ডাইনি সারাদিন বনে বনে ঘুরে বিভিন্ন জীব-জন্তু শিকার করতো। একদিন হঠাৎ এক গ্রামের ছোট একটি শিশু হারিয়ে বনে চলে আসে সে সময়ে ডাইনি গাছতলায় শিয়ালের বাচ্চা খেয়ে,ঘুমিয়ে ছিল। শিশুটির কান্না শুনে নীলমণি ডাইনির ঘুম ভেঙে যায়। ডাইনি ঘুম ভাঙতেই রাগে শিশুটিকে খুজতে শুরু করে যেন তাকে পেলেই গিলে ফেলবে। শিশুটি ছিল খুবই সুন্দর। ডাইনি যখন শিশুটিকে খুজে পায় তখন তার মনে মায়া জন্মে যায় তার রাগ মিলিয়ে যায় হাওয়াই মিঠাই এর মতো। সে সিন্ধান্ত নেয় শিশুটিকে লালন-পালন করে বড় করে তুলবে। সে ডাইনি শিশুটিকে তার আস্তানায় নিয়ে যায় এবং তাকে সেবা-যত্ন করে সারিয়ে তুলে।
নীলমণি ভয়ংকর ডাইনী এখন এক মায়ের মতো হয়ে গেছে, এখন আর সে হিংসাত্মক আচারণ করে না এবং জীব-জন্তু শিকারের বদলে বিভিন্ন ফসল চাষ করা শুরু করে।
ধীরে ধীরে শিশুটি বেড়ে উঠে ডাইনীর সাথে। শিশুটির বয়স যখন আট তখন ডাইনি ভাবে তাকে তার মা-বাবার কাছে দিয়ে আসবে। যেইভাবা সেই কাজ,একদিন ডাইনী কাঁদতে কাঁদতে গ্রামের দিকে চলতে শুরু করে তখন সেই শিশুটি(যার নাম ডাইনি জানে না) সে বলে উঠে:
শিশু: মা আমরা কোথায় যাচ্ছি
নীলমণি: বাবা,আমরা তুর মায়ের কাছে যাচ্ছি
শিশু: তুমিই তো আমার মা!
নীলমণি: আরে না,রে না তুর আসল মা আমি না
শিশু: আমি তোমায় ছেড়ে কোথাও যাবো না মা।
নীলমণি: আমি অনেক বড় ভুল করেছি রে বাবা,না জানি তুর মা-বাবা কত কষ্ট পেয়েছে আর আমি তুর মায়ায় পড়ে কখন জানি ভয়ংকর ডাইনী থেকে মা হয়ে গেলাম।
শিশু: তুমি ডাইনী না,তুমি আমার মা।
নীলমণি: না বাবা আমি তুর মা নই আমি তুকে বনে কুড়িয়ে পেয়েছি।
শিশু: (কাঁদতে কাঁদতে) মা…।
গ্রামের মানুষ নীলমণি ডাইনীকে দেখে হইচই শুরু করে দেয় সবাই সমসুরে বলতে থাকে,পালাও পালাও গ্রামে ডাইনী এসেছে সবাই পালাও।
তখন নীলমণি ডাইনী সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠে,শোন গ্রামবাসীগণ আমি তোমাদের কোন ক্ষতি করতে আসিনি আমি তোমাদের গ্রাম থেকে আট বছর আগে হারিয়ে যাওয়া শিশুটিকে তার বাবা-মার কাছে ফিরিয়ে দিতে এসেছি। ডাইনী কাঁদতে কাঁদতে সবার উদ্দেশ্যে পুনরায় বলতে শুরু করে,আমাকে তোমরা ক্ষমা করে দিও,আমি তোমাদের গ্রামের সন্তানকে নিজের সন্তানের মতো করে বড় করেছি আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি তাই ওর মা-বাবার কাছে তাকে ফিরিয়ে দিতে চাই। তখন গ্রামের মোড়ল বলে,তুমি মহান ডাইনী,তুমি মহান। তুমি আমাদের বাচ্চাকে বাঁচিয়ে রেখেছো আর আমরা কিনা তোমার ভয়ে বনে যেতাম না। তুমি কি চাও বলো ডাইনী বোন।
নীলমণি: আমার কিচ্ছু চাইনা, তুমি আমাকে বোন ডেকেছো তাতেই আমি অনেক খুশি। শুধু এইটুকুই আমার চাওয়া,আমি আমার সন্তান স্নেহ দিয়ে বড় করা এই মানবশিশুকে একটি নাম দিতে চাই।
তখন গ্রামের সবাই একসাথে বলে উঠে অবশ্যই অবশ্যই ডাইনী বোন।
তখন নীলমণি ডাইনী বলে,আমার পালিত সন্তানের নাম দিতে চাই মুগলি।
সবাই দারুণ খুশি হয়ে সমসুরে বলতে থাকে,বাহ্ কি সুন্দর নাম,বাহ্ কি দারুণ নাম।
তারপর ডাইনী শিশুটিকে তার মায়ের হাতে তুলে দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বনের দিকে চলে যায়।।