অথই নূরুল আমিন
বাংলাদেশের বিগত তেপ্পান্ন বছরের ইতিহাসে,রাষ্ট্রীয় কর্মপরিকল্পনার অভাবে, দেশে বর্তমানে ছয় কোটির বেশি মানুষ বেকার অবস্থায় আছে। বেকারত্ব হচ্ছে একটি মানুষ তথা সমাজের জন্য অভিশাপ। যার ফলে দেশজুড়ে ঘটছে নানারকম অপ্রীতিকর ঘটনা। এখানে রয়েছে চুরি,ডাকাতি, ছিনতাই এবং প্রতারণার মত জগণ্য তম অসংখ্য ঘটনা। যার বেশিভাগেই হচ্ছে বেকার লোকদের জন্য। অর্থনৈতিক মন্দ পরিবার গুলোতে প্রতিনিয়ত ঘটছে বিবাহ বিচ্ছেদের মত অনাকংখিত সব ঘটনা।
যার ফলে এখানে ঘন ঘন মামলা মকদ্দমা হচ্ছে। এই মামলা গুলো পরিচালনা করতে গিয়ে আরো কিছু লোকজন অর্থহীন হয়ে পরছে দিনদিন । কারণ আমাদের দেশের আইন আদালত গুলো সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত ভাবে হয়েছে। এখানে জন স্বার্থের কথা মাথায় রাখা হয়নি। কত টাকা পর্যন্ত খরচ করে একটি মামলা থেকে একজন রেহাই পাবেন। তার কোনো হিসাব নেই। বতর্মান সময়ে একটি মামলা হলেই। প্রথমেই পুলিশেরা ঘুষ খাবে। তারপর আইনজীবিরা খাবে। এখানে জামিন বা রায়ের পূর্বে বিচারপতিরা ঘুষ খাবে এবং খাচ্ছে ও প্রতিনিয়ত।
বাংলাদেশের সংবিধান, আইনকানুন- আদালত কোথাও সাধারণ জনগণের জন্য কোনো সুবিধা নেই। যাদের টাকা আছে, তারা জামিন পাচ্ছে, মুক্তি পাচ্ছে। আর যাদের টাকা নেই, তারা হয়তো কেউ কেউ পলাতক নয়তো জেলে আছে।
নিশ্চিত করে বলা যায়, বাংলাদেশের আইনকানুন তার নিজস্ব গতিতে চলছে না। এখানে সবকিছু টাকার খেলা। যত বড়ো দাগি আসামী হোক। সে জামিন পেয়ে যাবে টাকার বিনিময়ে । এখানে দুইভাগ দাগি আসামী জামিন পায় না। তার কারণও আবার ভিন্ন।
অন্য দিকে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, আজকে নেই বললেই চলে। প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক গুলোতে শিক্ষনীয় যা দেয়া আছে। এগুলো শিখে কোনো শিক্ষার্থীদের কোনরকম কোনো লাভ হচ্ছে না তাদের জীবনের ক্ষেত্রে। এছাড়া এস এস সি পরীক্ষায় যখন সরকারের পক্ষ থেকে নির্বোধের মতো ৯০% এর উপরে শিক্ষার্থীদেরকে পাস করিয়ে দেয়া হয়। তখনই ঘটে এই শিক্ষার্থীদের জন্য কঠিন বিপদ। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা সুযোগ না পায়। তারপর তারা ভর্তি হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারপর শুরু হয় তাদের জীবন যুদ্ধ। টাকার জন্য যুদ্ধ। মধ্যবিক্ত পরিবারের সন্তানেরা, এখানের খরচ মেটাতে গিয়ে হতে হয় কত লাঞ্চিত। অথচ সরকার বছরেও পাঁচ হাজার লোকের চাকরি দিতে ব্যর্থ। অথচ এস এস সি পাস হয় প্রতিবছর সীমাহীন। সরকার তার নিজ থেকে মিল কারখানাও করে না।
এদিকে ঢাকাসহ দেশের বেশকিছু শহরে, আজকে চরম যানজট। বিশেষ করে জনগণের জীবন জীবিকা থেমে যাবার মত অবস্থা। তারপরও সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোন উদ্যোগ নেই। বতর্মান সরকারের কাছে বেশকিছু কমিশন তারা বেশকিছু সুপারিশ করেছে। সংবিধান পরিবর্তনের জন্য, কিছু আইন নতুন করার জন্য। অথচ এখানে বতর্মান আইন ব্যবস্থা নিয়ে, শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে, বেকারত্ব কমানো প্রসঙ্গে এবং যানজট নিরসন নিয়ে কেউ কিছু বলছেন না। এতেই প্রমাণ হয়ে যায়। দেশের সুশীল সমাজ বলতে আমরা যাদেরকে মনে করি। তারাও কিন্তু শোষক রাষ্ট্র নায়ক বা স্বৈরাচারী রাষ্ট্র নায়কদের চেয়ে কম মাথা মোটা নয়।
অথই নূরুল আমিন
কবি কলামিস্ট ও রাষ্ট্র বিজ্ঞানী