_মেহেদী হাসান সাব্বির।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল বরাবরই অবহেলিত। আর এই অবহেলিত অঞ্চলেই রয়েছে বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলার অন্তর্গত বাটামারা ইউনিয়ন, যার চারপাশ ঘিরে রয়েছে নদী। জলপথে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এখানকার মানুষ বহুদিন ধরেই মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। ৩০৯০ হেক্টর (৭৬৪০ একর) আয়তনের এই ইউনিয়নে জনসংখ্যা প্রায় ২১,৯৪০ জন অথচ নেই একটি মাত্র কলেজ বা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র।
প্রতিটি ওয়ার্ডে জনসংখ্যা
এই ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামেই বসবাস করছেন হাজারো মানুষ:
চরসাহেবরামপুর — ২,০৫২ জন।সেলিমপুর — ৩,৩৪০ জন।তয়কা — ৮৪০ জন।আলীমাবাদ — ১,১৫০ জন।টুমচর — ১,২৪৫ জন।চর আলীমাবাদ — ৭২০ জন।পূর্ব তয়কা — ৭৯৪ জন।বাটামারা — ৬,০৪৫ জন।রামচর — ৮৯২ জন।চর বাটামারা — ৭৯০ জন। চর আলগী — ৭৮০ জন। চর সেলিমপুর — ৮২০ জন।
মোট জনসংখ্যা: ২১,৯৪০ জন
স্বাস্থ্যসেবা: নদীপথ পাড়ি দিয়েও নেই উপকারঃ
চারদিক নদী দিয়ে ঘেরা এই ইউনিয়নে নেই একটি মাত্র ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার। কোনো অসুস্থতা বা জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হলে রোগীকে নদী পাড়ি দিয়ে অন্য উপজেলার শহরে নিতে হয়। সময়মতো চিকিৎসা না পাওয়ায় বহু পরিবার হারিয়েছে তাদের প্রিয়জনকে। গর্ভবতী নারী, শিশু, বৃদ্ধ কিংবা দূর্ঘটনায় আহত রোগীদের চিকিৎসার অভাবে দুর্ভোগের শেষ নেই।
শিক্ষা: স্বপ্নভঙ্গের আরেক নাম বাটামারাঃ
এই ইউনিয়নে রয়েছে প্রায় ৭ হাজার শিক্ষার্থী। প্রতিবছর প্রায় ৬০০ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পাস করে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার জন্য প্রস্তুত হয়। কিন্তু এই ইউনিয়নে কোনো কলেজ নেই। ফলে বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের দূরের কলেজে যাতায়াত করতে হয়।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে এখানকার অধিকাংশ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত, দরিদ্র কিংবা হতোদরিদ্র পরিবারের সন্তান। যাতায়াত খরচ, আবাসন সুবিধা, টিউশন ফি ইত্যাদি বহন করার সামর্থ্য অনেক পরিবারেরই নেই। ফলে তারা অকালেই শিক্ষাজীবন থেকে ছিটকে পড়ে।
প্রশ্ন থেকে যায়—এই প্রজন্মের ভবিষ্যৎ কি শুধুই দারিদ্র্যের কাছে পরাজিত হবে? তাহলে জনপ্রতিনিধিরা কোথায়?
বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের আলো ছুঁয়ে যাচ্ছে দেশের নানা প্রান্ত। অথচ বাটামারা ইউনিয়নের ভাগ্যে কেন সেই আলো জুটছে না? এই ইউনিয়নের এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড সদস্য কিংবা পঞ্চায়েত নেতারা কি এই করুণ বাস্তবতা থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছেন?
আমি মেহেদী হাসান সাব্বির একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে চাই—
বাটামারা ইউনিয়নে অবিলম্বে একটি পূর্ণাঙ্গ কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হোক। অন্তত একটি সরকারি মানসম্পন্ন কমিউনিটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপন করা হোক।
এই দাবিগুলো শুধুমাত্র একটি এলাকার দাবি নয়, এটি একটি প্রজন্মের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম।
আমরা চাই, বাটামারার সন্তানরাও বড় হয়ে ডাক্তার হোক, ইঞ্জিনিয়ার হোক, শিক্ষক হোক, বিজ্ঞানী হোক। তারা যেন নদীঘেরা গণ্ডির ভিতর আটকে না থাকে—তারা যেন মুক্তভাবে উড়তে পারে আকাশে, নিজের স্বপ্নে, নিজের ভবিষ্যতের দিকে।