কবি
আমিরুল ইসলাম জিবন
রাত পোহালেই বোমা ঝরে, রক্তে রাঙা পথ,
ঘুম ভাঙে না আর শিশুর, মায়ের বুকেই মৃত্যু জগত।
ছিন্নভিন্ন খেলনা পড়ে, জানালায় চেয়ে রয়,
জীবনের গল্প যেন এখন, মৃত্যুর ছায়ায় বই।
দুধের শিশুর কান্না বাজে, আগুন-বারুদের মাঝ,
আকাশজুড়ে ধোঁয়ার ছবি, কবর ফুলে আজ।
জীবনের গান থেমে গেছে, শব্দ শুধু যুদ্ধের,
পিতার হাত ধরে মরেছে ছেলে, মৃত মুখে ছন্দ লেখে ফের।
প্রতিদিনই ছিন্ন লাশে গড়ে উঠে এক পতাকা,
বেঁচে থাকা মানে এখন গায়ে মৃত্যু আঁকা।
যেখানে খেলার মাঠ ছিল, এখন কবরস্থান,
সেখানে শুধু শব যাত্রা, হারিয়েছে প্রাণ।
ঘরের কোণে বোনটি কাঁদে—“ভাই কই গো ভাই?”
এক বুক কান্না চেপে রেখে, মা শুধু নীরব দায়।
শিশুদের ওই আঁখির জলে, রক্ত ঝরে রাতে,
যত চোখে তারা চেয়ে রয়, অভিশাপ ঘোরে সাথে।
পৃথিবীর সব সভ্যতা আজ, ব্যস্ত নিজের ভারে,
কে কাঁদে কার জন্য বলো? কষ্ট কি দেখে তারা?
জাতিসংঘের নীতির বইয়ে লেখা নেই এ ব্যথা,
শুধুই গাজা বলেই কি নেই ওদের প্রিয়তা?
আহা! ছোট্ট মুখে বিস্ময় জমে,
"কেন আমার খেলনা ভাঙে?"
"কেন আমার ভাই আর ওঠে না?"
"আমার আঁকা বাড়ি কেন আগুনে পুড়ে যায়?"
এই প্রশ্নেরা জমে উঠে অভিশাপে রূপ নেয়,
ওদের কান্না আর সহ্য হয় না আকাশকেও—ঝরে বৃষ্টি দেয়।
ওদের অভিশাপ নিঃশব্দে কাটে বাতাসের বুকে,
একদিন তা ফিরবে ঝড় হয়ে—অন্ধকারে আলো তুলে।
গাজার পথে শিশুরা হাঁটে, পায়ে নেই জুতা,
তবু তাদের চক্ষু জ্বলে, রক্ত নয়, তেজে ভরা।
ওদের ঘুম নয় শান্তির, ওদের খেলনা নয় রঙিন,
তবু তারা স্বপ্ন দেখে, বুক ভরা সাহসে গিন।
ওরা জানে—প্রতিটি মৃত্যু জন্ম দেয় প্রতিবাদের,
ওরা জানে—একদিন সূর্য উঠবেই অন্ধকার ভেদ করে।
এই শিশুরা একদিন হবে ইতিহাসের রাজপুত্র,
যারা খালি হাতে গড়ে নেবে নতুন মানব-ভবিষ্যৎ।
ওদের অভিশাপে কাঁপবে একদিন ন্যায়ের সিংহাসন,
এই কান্নার প্রতিধ্বনি ছড়িয়ে পড়বে বিশ্ব-প্রান্তর।
তোমরা যারা চুপ করে আছো—জানো না কী দাম,
এই নীরবতা কিনে আনবে পৃথিবীর শেষ সন্ধ্যাবেলা নাম।