আমিরুল ইসলাম জীবন
মেস ভাড়া চাই, হ্যাঁ ভাই, একটুখানি সহানুভূতি,
ফেসবুকে নয় শুধু লাভ রিঅ্যাক্ট আর কবিতার স্তুতি।
জীবনের খাতা খালি, পকেটেও পাত্তা নাই,
তবু প্রতিদিন ভাবি—আজ কিছু একটা হোক, তাই?
ঘরভাড়া মালিক হাসেন না, দেন না ছাড়,
বললেন—”কবিতা দিয়ে পেট চলে না, বুঝো এবার চারিধার!”
আমি বললাম, “স্যার, একটা গদ্য দেব, চমৎকার!”
তিনি বললেন, “আমার মেয়ে তোকে বিয়ে করবে? উড়াও কাব্য তোমার!”
মেসে ভাত নাই, ডাল ফুরায়, হাড়িতে বাসি তরকারি,
কিন্তু ইনবক্সে আসে প্রেমপত্র, ছেলেমেয়ের গোপন খাতাবহারি।
বন্ধুরা সবাই দার্শনিক, কেউ কেউ কবি, কেউ নায়ক,
কিন্তু কেউ ডাকে না খেতে, বলে না—”চল ভাই, এক প্লেট পায়েস খা একটুখানায়ক।”
রুমমেট বলে—”তুই লেখক, তো তোর ইনকাম কই?”
আমি বলি—”তোর হেডফোন যেমন ডিজাইন, তেমনি আমার পুঁজি—বই!”
ও বলে—”তাহলে বিক্রি কর বই, খাও!”
আমি বলি—”তাহলে বেঁচে থাকবে স্বপ্ন নয়, কেবলই দাও-দাও-দাও।”
বন্ধুরা, আজ একটু বেশি চাই, একটু ভালোবাসা নগদে,
বিকাশ নাম্বারটা ইনবক্সে দিচ্ছি, পাঠাও—সাহায্যই যদি সদে।
তোমার একটা কফির দাম, হতে পারে আমার কাব্যের সুর,
তোমার একদিনের রিচ ফুড, হতে পারে আমার মায়ের ভাত, একটু গুঁড়।
না, করুণা নয়, আমি চাই সম্মান,
যেখানে একজন কবিও খেতে পারে পরিপূর্ণ ভোজন খান।
কেন প্রতিভা শুধু মঞ্চে, আর পেছনে বেঁচে থাকে ধার-দেনায়?
কেন একটাও বই বিক্রি হয় না, অথচ প্রেমে পড়ে পাঠক হাজার হাজার?
তোমরা ভালোবাসো ছবি, ভালোবাসো ক্যাপশন,
তোমরা নাও দাও প্রপোজ, নাও সায়েন্টিফিক এক্সপ্লানেশন।
কিন্তু একবার ভেবো না, এই কবি রাত জাগে,
জীবনের রস কেটে তোলে—তবু ঘরে গ্যাস শেষ, ভাত বাগে।
তাই আজ চাই, একটু সাড়া, একটু টাকা,
লজ্জার দেয়াল ভেঙে বলছি—ভাই, পাঠাও, টাকায় চলে পাকা।
চা খাই না তিনদিন, মোবাইলে ব্যালেন্স শুন্য,
তবু পোস্ট দেই এমনভাবে—”জীবন চলুক চির অমলিন, নির্ভরহীন, ধন্য।”
শেষে বলি, একদিন যদি না থাকি,
তোমরা ছবি দেবে, ক্যাপশনে লিখবে—”তুমি ছিলে এক চির প্রেমাকী।”
তখন কী হবে ভাই? তখন কী বাঁচাবে চোখের জল?
আজ যদি পারো—তুলে দাও, টাকাটা পাঠাও, কাব্যের চলুক চল।