- এম আলী হুসাইন।
দুই হাজার আট সালে যখন প্রথম মোবাইল পেয়েছিলাম তখনকার আনন্দের অনুভূতিটা ছিল সেই ভিন্ন রকম যা প্রকাশ করার মত নয়; আমি লিখেও প্রকাশ করতে পারব না যেন অনন্য সেই অনুভূতি অপ্রকাশ্য থেকেই যাবে।
এতিম সন্তানের হাসি মাখা মূখ কয়জনে দেখতে চায়? গণনার কিছু মানুষ ছাড়া কেউই এতিমের সাথে ভালো ব্যবহার করেনা। তবে ছোট চাচা অনেক ভালোবাসতেন কিন্তু উনার সাক্ষাত পাওয়া ছিল কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কেননা তিনি তখন প্রবাসে ছিলেন তারপর আজকের মত যখনকার যোগাযোগ মাধ্যম এত সহজ ছিলনা। তারপর তখন আমি একজন শিক্ষার্থী, মোবাইল তো ছিলনা এবং ছাত্র হিসাবে মোবাইল ব্যবহারে ছিল নিষেধাজ্ঞা এমন কি কঠোরতা।
তবুও মোবাইল ব্যবহারের আগ্রহ প্রকাশ করলে ছোট চাচা প্রথম নতুন মোবাইল বিদেশ থেকে পাঠিয়েছিলেন। আর সেই মোবাইল ছিল আমার প্রথম ব্যবহৃত নতুন মোবাইল। ১১১০ মডেলের বাটম মোবাইল অবশ্য বেশীদিন ব্যবহার করতে পারিনি, নিজের ভূলে কিছু দিনের ভিতরে নষ্ট হয়ে যায়।
তারপর ক্রমে ক্রমে অনেক মোবাইল ব্যবহার করি। ২০১৫ সালে প্রথম নতুন টাচ মোবাইল ব্যবহার করি। তবে কমলাপুর রেলষ্টেশন থেকে হারিয়ে ফেলি এটা ছিল আমার জীবনের প্রথম টাচ মোবাইল যা হারিয়ে যায় মাত্র পনের দিনের ভিতরে। তবে হ্যাঁ এর আগে আরো তিনটি বাটম মোবাইল হারিয়ে ছিলাম যেগুলোর মাঝে কোন আক্ষেপ ছিল না।
প্রথম পাওয়া টাচ মোবাইল হারিয়ে যাওয়ার স্মৃতি এখনো ভাবায় ক্ষণে- ক্ষণ জাগিয়ে তুলে ভিন্ন আকুতি ও অনুভূতি।
মোবাইল পাপ্তি, হারানো স্মৃতি নিয়ে কোন এক সময় লিখব। আজ আর সেই দিকে যাচ্ছিনা। বরং আজকের হারিয়ে যাওয়া মোবাইল নিয়ে কিছু আলোকপাত করব। আশা করি সচেনতার জন্যে হলেও অনেকের ভালো লাগবে।
জুমা পর পর কিছু বাজার আনার জন্যে বাসা থেকে বের হই। সাথে ছিল বড় মেয়ে সামিহা। খুব দ্রুত চলে আসব তাই একটু তাড়াহুড়া ছিল। কেননা রোজার দিন একটু তো রেষ্ট নিতে হয়।
মিনিট দশেকের ভিতরে বাজারে পৌঁছে যাই। মাছের বাজারে তেমন মাছ নেই। মালেকাবাড়ির মাছ ব্যবসায়ীরা ক্রমে আসছে। দেখলাম মাত্র কয়েকজন ব্যবসায়ী আছে। তখন সময় দুইটা শেষ হয়ে আড়াইটার ঘরে মিনিটের কাটা।
মাছ, তেল, তরকারী সহ বাজার ক্রয় করে আমরা বাবা মেয়ে দুইজন বাসার উদ্দ্যশে একটি অটোতে বসলাম।
ষাট সেকেন্টের ভিতরে অটো ছেড়ে দিল। তিন মিনিট পর অটো থেকে নেমে বড় মেয়েকে একটি খেলনার মোবাইল কিনে দিলাম। অতঃপর পাঁচ মিনিটের ভিতরে বাসায় পৌঁছলাম। অটো চলে গেল তার গ্রন্থব্যে পথে।
বাসায় আসার পরপর ই মোবাইল খুঁজতে থাকি। দুঃখজনক সত্য মোবাইল পকেটে নেই। আমার কাছেও নেই। নেই ঘরে বা বড় মেয়ের হাতে!!!
এখন কি করার ছোট দুইটি মেয়ে সহ আমরা চাজনের ছোট সংসারের সবার চেহারায় ভিন্ন রকম চাপ। মেয়েরা আমার দিকে থাকিয়ে আছে। কারো মূখে কোন কথা নাই। ঠিক তখন আমিও কিছু বলতে পারছিনা। একটু রেষ্টে যেতে চাইলাম কিন্তু চোখে যেন সেই রেষ্ট নাই। তারা আমাকে তাড়া করে আবারো পাঠিয়ে দিল বাজারে।
আমি তাদেরকে ইফতার রেডি করার কথা বলে আবার বাসার বাহিরে চলে গেলাম। যে যে দোকান থেকে যা যা কিনেছিলাম তাদের সবাইকে বলে আসলাম। দেখলাম তারাও আমার সাথে টেনশন করছে।
আসলে কি হল??
ফোন যাচ্ছে রিসিব হচ্ছে না।
এর মাঝে মোবাইলে চার্জ ছিল তাই বেশী বেশী ফোন দিচ্ছি না। ভয় ছিল বন্দ হয়ে যাওয়ার। তাই কিছু সময় পর পর ফোন দিচ্ছিলাম। এইভাবে ইফতারের পূর্ব পর্যন্ত প্রায় দুই তিন ঘন্টা ফোন দিয়েছিলাম কিন্ত রিসিব হল না।
কিছু করার নাই নিজের জানামত দোয়া পড়ছিলাম যদি পেয়ে যাই তাহলে তো অনেক ভালো আর না পাইলে নাই। কিন্তু মেয়েরা আমাকে কিছু করতে দিচ্ছে না। তারা আমার থেকে আরো বেশী টপনশনে। তারা বারবার বলছে: মোবাইলে আমাদের ফটো আছে, দাদীর ফটো আছে এ ছাড়া আরো কিছু তাদের আর্ট রয়েছে যা তাদের খুব প্রয়োজন। সুতরাং হারিয়ে যাওয়া মোবাইল আমার জন্যে না হলেও মেয়েদের জন্যে অবশ্য পেতে হবে।
জিডি করব নাকি জরুরি নম্বার ৯৯৯-৩০৩ ফোন দিব? নাকি কারো পরামর্শ নিব? মাথায় অনেক কিছু আসছে তবে কি করব খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
ভাবনার দুই তিন ঘন্টার পর ফোন রিসিব হল ঠিক সেই সময় ইফতার খচ্ছিলাম। ১২ তম রমজানের ইফতারের মুহুর্তে ফোন রিসিব হওয়ার ভিন্নরকম অনুভূতির মাঝে সালাম বিনিময় হল।
ভাই ইফতার করছি, ইফতার ও নামাজ শেষে আপনার সাথে দেখা করব।
ওপাশ থেকে তিনি সব লুকেশন দিয়ে রেখে দিলেন।
ইফতার ও নামাজ শেষে লুকেশনে চলে গেলাম। লুকেশন বেশী দূরে নয় বাসা থেকে মাত্র পাঁচ মিনিটের দূরত্ব।
সালাম বিনিময়ের সাথে সাথে দেখা হল সেই অটো ড্রাইভারের সাথে। যার অটো দিয়ে জুমা পর বাজার থেকে বাসায় এসেছিলাম।
অটো ড্রাইভার হুমায়ুন কবীর ভাই। বাড়ী ময়মনসিংহের গৌরীপুর। খুব মিশুক। আনন্দের সাথে মোবাইলটি ফিরিয়ে দিলেন। পাশে থাকা আরেকজন পরিচিত অটোচালক বিনিময়ে কিছু চেয়ে বসলেন। আমি রাজি হলাম নিজের মনের খুশিতে কোন একটা গিফট দেব। কিন্তু হুমায়ুন ভাই কিছু গ্রহন করলেন না। বরং খুশি মনে আমানতটা ফিরিয়ে দিলেন।
এখন হুমায়ুন ভাই মোবাইল কেমনে পাইলেন বিস্তারিত বলছি উনার স্বীকারোক্তিতে। আমাদের নামিয়ে দেওয়ার দুইমিনিটের রাস্থা সামনে যাওয়ার পর আরেকজন পেচেন্জার অটোতে উঠে। সে ড্রাইভারের সাথে সামনের বামের সিটে বসে। অটো চলতে থাকে এর মাঝে দুই মিনিট চলার পর পেচেন্জার পিছনে আসতে চায় বলে হুমায়ুন ভাইকে জানায়।
কৌতুহল বশতঃ হুমায়ুন ভাই গাড়ী থামিয়ে তাকে পিছনে পাঠালেন এবং লক্ষ্য করলেন দ্রুত সিট পরিবর্তনের কারণ কি হতে পারে??
হুমায়ুন ভাই তখন দেখলেন পিছনের সিটে একটা মোবাইল পড়ে আছে এবং সে সিটে যাওয়ার আগেই মোবাইলটা হাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
হুমায়ুন ভাই বললেনঃ মোবাইল ত এইটা আপনার নয়?
পেচেন্জারঃ নিজের মোবাইল দাবী করে এবং গাড়ী গ্রন্থব্যে নিয়ে যেতে বলল।
হুমায়ুন ভাই সন্দেহের মাঝে সামনে চলতে থাকে। এর মাঝে আমাদের ফোন যাচ্ছিল। পেচেন্জার ফোন রিসিব করছে না আবার বন্দও করতে পারছে না। দশ মিনিট এই ভাবে গাড়ী চলতে থাকে। গ্রন্থব্যে পৌঁছার আগেই পেচেন্জার নেমে যেতে চাইল ঠিক তখন অটো চালক হুমায়ুন ভাই খুব দৃঢ়তার সাথে তাকে ধরলেন। তাদের দুইজনের মাঝে চলতে থাকে তর্ক।
আশে-পাশে লোকজন চলে আসে এর মাঝে চলে আসেন আমার পূ