আমিন উল্লাহ আখতার
নমরূদের অগ্নিকুণ্ডে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম নিক্ষিপ্ত হলেন। পরাক্রমশালী আল্লাহ আগুনকে নির্দেশ করলেন ‘ আর আমি নির্দেশ দিলাম। হে আগুন! ইবরাহীমের জন্য শীতল ও আরামদায়ক হয়ে যাও। আর ( লোকেরা) তাঁর ক্ষতি সাধন করতে চেয়েছিলো কিন্তু তাদেরকেই আমি ক্ষতিগ্রস্ত করে দিলাম। (সূরা আম্বিয়াঃ৬৯-৭০) সাথে সাথে রহিত হলো আগুনের দাহিকা শক্তি। নমরূদের অগ্নিকুণ্ড ইবরাহীমের জন্য পুষ্পোদ্যান। নিশ্চিন্তে ও নিরাপদে তাতে বসে রইলেন হাস্যোজ্জল,প্রফুল্লচিত্তে ইবরাহীম আলাহিস সালাম। বিশ্বাস ও অভিজ্ঞতা মানুষকে এ শিক্ষা দিয়েছিলো যে, মিঠাপানির ঝরনাধারা আর আর উর্বর মাঠের সোনালী ফসলই হচ্ছে জীবনের উৎস। তাই এমন সব স্হানেই মানুষ গড়ে তুলেছে সমৃদ্ধ জনপদ যেখানে আছে মিঠা পানি। আছে উর্বর মাঠের সোনালী ফসল আর সবুজ ফল ও ফুল। আছে শিল্প বাণিজ্যের সুযোগ – সুবিধা এবং জীবন কোলাহলের সুন্দর সম্ভাবনা। সনাতন প্রথার বিরূদ্ধে বিদ্রোহ করলেন হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম। স্হূল দৃষ্টির পর্দা উম্মোচন করে করে তিনি দেখিয়ে দিলেন মাটি কিংবা পানি নয়, জীবনের উৎস হচ্ছে জগত ও জীবনের স্রষ্টা স্বয়ং আল্লাহ পাক। মা ছেলের ছোট্ট সংসারের জন্য তিনি বেছে নিলেন এমন উষর মরু অঞ্চল, যেখানে জীবন ধারণের জন্য ছিলো না এক কাতরা পানি কিংবা সবুজের একটু পরশ। ছিলো না শিল্প- বাণিজ্য ও চাষ কৃষির ক্ষীণ সম্ভাবনা। সম্পদ সমৃদ্ধি এবং স্বাচ্ছন্দ্য ও সচ্ছলতাপূর্ণ বিচ্ছিন্ন, পর্বত – পাহাড় বেষ্টিত সেই নির্জন মরুভূমিতে প্রিয়তমা স্ত্রী ও ছেলে ইসমাঈল আলাইহিসসাল্লামকে রেখে যাওয়ার প্রাক্কালে সুদীর্ঘ পথ চলার ক্লান্তিতে অবসন্নতা এবং প্রিয়জনের আশু বিয়োগ বেদনায় বিষন্নগ্রস্ত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মাওলার দরবারে দু’হাত তুলে করলেন এক মর্মস্পর্শী মুনাজাত।
‘হে পরওয়ারদিগার! আমি আমার সন্তান -পরিজনের একাংশকে তরুলতাহীন এক উপত্যকায় আপনার পবিত্র ঘরের ছায়ায় আবাদ করেছি । ( এজন্য করেছি) তারা যেন হে পরওয়ারদিগার! সালাত কায়েম করে। সুতরাং একদল মানুষের অন্তর তাদের দিকে ঝুঁকিয়ে দিন এবং খাদ্য রূপে তাদেরকে ফল দান করুন হয়ত তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। ( সূরা ইবরাহীমঃ ৩৭)
লেখক: আমিন উল্লাহ আখতার
কানাইঘাট, সিলেট