দ্রুত বা তাড়াহুড়ো খেলে শরীর ও মস্তিষ্ক সঠিক সময়ে সঠিক সংকেত দিেতে বুঝতে পারে না।দ্রুত খাবার খেলে খাবারের পরে দীর্ঘক্ষণ তৃপ্তিবোধ করবেন না।আজকাল অনেকেই মোবাইল, ল্যাপটোপ,কম্পিউটার মতো স্ক্রিনের সামনে বসে খাবার গ্রহন করে। এতে৷ খাবারের যেমন মনোযোগ হারিয়ে ফেলে তেমনি আনন্দপূর্ণ সহকারে খাবারটি গ্রহন করেন না।
দ্রুত খাবার গ্রহন মানুষ ব্যক্তিভেদে বিভিন্ন কারনে খেতে দেখা যায়।
১। খাবারের মধ্যে অনেক্ষন অপেক্ষা করাঃ
যদি আপনি ক্ষুধার্ত থাকবেন তখন শরীরের গতি শক্তিও কম হবে এবং সামনে যা পাবে তাই দ্রুত খেয়ে ফেলবে।
সময়ের অভাবঃ পর পর মিটিং, স্কুল থেকে বের হলে প্রাইভেট বা টিউশন,ইত্যাদি বিভিন্ন একেক পর একের কাজ থাকায় ঠিকমত খাবারের সময় পাই না।অনেকেই খাবার এড়িয়ে চলে।এতে সময়মত খাবার গ্রহন না করার ফলে দ্রুত খাবার খেয়ে ফেলে।
আবেগ প্রবন হয়ে খাওয়াঃ মানসিক চাপ, বিষন্নতা থাকার কারনে প্রয়োজনের চেয়ে অনেকেই বেশি খেয়ে ফেলে।
অন্যের সাথে তাল মিলিয়ে খাওয়াঃ দ্রুত খাওয়া ব্যক্তিদের সাথে সময় কাটানোর জন্য আপনি কত দ্রুত খেতে পারেন তা তাল মিলিয়ে খাবার খাওয়ার প্রভাব পড়ে।
অভ্যাসগত কারনঃ অনেকেরই পারিবারিকভাবে বা এমনিতেই দ্রুত খাওয়ার অভ্যাস আছে। ফলে দ্রুত খাবার গ্রহন করে।এটি পরিবর্তন করতে হবে।
দ্রুত খাবার খেলে কি ওজন বাড়ে অনেকেই প্রশ্ন করে।
হাঁ। দ্রুত খাবার খেলে মস্তিষ্ক সঠিক সময়ে সংকেত দিতে পারে না। ফলে ব্যাক্তি অতিরিক্ত খেয়ে ফেলে। আর এই অতিরিক্ত খাওয়া অতিরিক্ত ক্যালরি জমে শরীরে।যার ফলাফল ওজন বাড়ার ঝুঁকি থাকে।শুধু ওজন বাড়ে না দ্রুত খাবার খাওয়ার কারনে মেটাবলিক সিনড্রোমের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।মেটাবলিক সিনড্রোম হল এমন একটি অবস্থা যা হৃদরোগ,স্ট্রোক,এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
ধীরে ধীরে খাবার খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা কি কি
হজমশক্তি উন্নত করেঃ ধীরে ধীরে খাবার চিবিয়ে খেলে হজমশক্তি উন্নত হয়।ধীরে ধীরে খাবার গ্রহন করার ফলে পরিপাকতন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করার সময় পায় এবং খাবারকে শক্তি এবং পুষ্টিতে ভেঙ্গে ফেলতে সাহায্য করে।
খাবার আনন্দ পায়ঃ ধীরে ধীরে খাবার খাওয়ার ফলে প্রতিটি খাবারের স্বাদ ও অনুভুতি পাওয়া যায়।এতে খাবারের মনোযোগ বা মাইন্ডফুল পূর্ণবোধ হয়।
খাবারের পরিমাপ নিয়ে সচেতনতাঃ ধীরে ধীরে খাবার খাওয়ার ফলে আপনি কতটা খাচ্ছেন,কখন পেট ভরছে তা অনুভব করতে পারবেন এবং অতিরিক্ত খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন হবেন।এতে ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করবে।
ধীরগতিতে কিভাবে খাবার গ্রহন করবেন তার জন্য কিছু টিপসঃ
১।প্রতিটি খাবার কমপক্ষে ২০ বার চিবান। এতে হজম জনিত কোন সমস্যা হবে না।
২। খাবারের সময় কোন মোবাইল, টিভি স্ক্রিনিং এর সামনে খাবেন না।
৩।মন দিয়ে খাবার গ্রহন করুন। মন দিয়ে খাবার বলতে খাবার কেমন দেখাচ্ছে,স্বাদ কেমন,খাবারের রঙ্গ গঠন কেমন,চিবানোর সময় এর স্বাদ এবং আপনার শরীরের প্রতিক্রিয়া কেমন দেখায় তার দিকে বিশেষভাবে মনোযোগ দেয়া।
৪।খাবারের মাঝে কিংবা খাবার শেষ হওয়ার পরপরই পানি খাবেন না। এতে হজম জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।খাবারের আগে পানি খেয়ে নিবেন।
৫।কাটা চামচ দিয়ে খাবার খেতে পারেন।
৬।শক্ত খাবার খান। হতে পারে আঁশযুক্ত বা মচমচের খাবার।এ ধরনের খাবার খেতে বেশি পরিশ্রম করতে হয়।এতে ধীরগতিতে খাবার পদ্ধতি শিখতে সাহায্য করতে পারে।
পুষ্টিবিদ লিনা আকতার
রাইয়ান হেলথ কেয়ার হসপিটাল এন্ড রিসার্চ সেন্টার