মোঃ বিল্লাল হোসাইন জয়
যশোরের গদখালীর বাণিজ্যিক ফুল চাষের জনক শের আলী সরদার মারা গেছেন। আজ বুধবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে পানিসারা গ্রামের বাড়িতে তিনি মারা যান।
শের আলী সরদারের বাবা আব্দুর রহমান সরদার এবং পাশের জেলা সাতক্ষীরার আব্দুল মাজেদ সরদার একসঙ্গে গড়ে তুলেছিলেন সরদার নার্সারি। সেখানে যশোরের এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয় শের আলী সরদারের। ওই ব্যক্তির মাধ্যমে তিনি আড়াই মণ রজনীগন্ধা ফুলের বীজ সংগ্রহ করে ৩০ শতক জমিতে রোপণ করেছিলেন। স্থানীয় চাষিদের দাবি, দেশের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে এটিই ছিল প্রথম ফুল চাষ। তিনি ৮০ দশকে ঢাকার শাহবাগে মালঞ্চ নামে একটি ফুলের দোকানও দিয়েছিলেন। এটাকে বলা হয় দেশের মধ্যে ফুলের প্রথম দোকান।কৃষক শের আলী সরদারের হাত ধরে দেশে ফুলের বিস্তৃত ঘটেছে। আস্তে আস্তে এই ফুল একটি জেলায় ব্র্যান্ডিং পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। সেই কৃষকের মৃত্যুতে আমরা মর্মাহত। যাঁর হাত ধরে দেশে ফুলের এমন বিস্তৃত ঘটেছে, সরকার যাতে সম্মানিত করে, আমরা সেই উদ্যোগ নেব।’
এদিকে শের আলীর মৃত্যুতে এক শোক বিবৃতি দিয়েছেন যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম। বিবৃতিতে তিনি জানান, শের আলী প্রথম ফুল চাষের উদ্যোক্তা। পরিশ্রম, নিষ্ঠাবান এবং সফল চাষের মাধ্যমে এলাকায় সমাদৃত ছিলেন। তিনি যশোর জেলায় উন্নত প্রজাতির গোলাপ, গ্লাডিওলাস, জারবেরাসহ নানা প্রজাতির ফুলের চাষ শুরু করে স্থানীয় চাষিদের ফুল চাষে উদ্বুদ্ধ করেন। তাঁর অন্যতম উদ্যোগ গদখালীকে দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্রে রূপান্তরে অনবদ্য ভূমিকা পালন করে। তাঁর মৃত্যুতে যশোর জেলা প্রশাসন গভীরভাবে সমবেদনা জ্ঞাপন করছে।
বাদ জোহর পানিসারায় শের আলী সরদারের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বাদ আসর পানিসারার ফুল মোড়ে। পরে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
শের আলী সরদার ১৯৮৩ সালে পরীক্ষামূলকভাবে পানিসারা গ্রামে প্রথম ৩০ শতক জমিতে রজনীগন্ধা ফুল চাষ করেন। এর পর থেকে এই অঞ্চলে ধীরে ধীরে ফুল চাষ বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে ঝিকরগাছার গদখালীতে যে ফুলের রাজ্য গড়ে উঠেছে, তাঁর উদ্যোক্তা ছিলেন শের আলী সরদার।
বর্তমানে ঝিকরগাছার গদখালী এলাকায় দেশে উৎপাদিত ফুলের ৬০ শতাংশ এই এলাকায় চাষ হয়। গদখালী অঞ্চলে ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ১১ ধরনের ফুল বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়। এই এলাকার ছয় হাজার পরিবারের লক্ষাধিক মানুষ ফুল চাষের সঙ্গে জড়িত। প্রতিবছর সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার ফুল উৎপাদিত হয়।