দ্বীপ সরকার, জেলা প্রতিনিধি ময়মনসিংহ :
ময়মনসিংহ নগরের যানজট নিরসনে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচলে ছয়টি সড়ক নির্ধারণ করে দিয়েছে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অটোরিকশাচালকেরা সব সড়কেই আগের মতো অটোরিকশা চালাতে চান। ছয়টি সড়ক নির্ধারণ করে দেওয়ার প্রতিবাদে আজ রোববার সকাল থেকে অটোরিকশাচালকেরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু করেছেন। এতে বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন।
শনিবার সন্ধ্যার পর অটোরিকশাচালকেরা প্রচারপত্র বিলি করে রবিবার সকাল থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ রাখতে আহ্বান জানান।রবিবার সকাল থেকে নগরের কোনো এলাকায় অটোরিকশা চলাচল করছে না। তবে চালকেরা নগরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে অবস্থান করছেন। সকাল ১০টার দিকে নগরের চরপাড়া মোড়ে গিয়ে চালকদের একদল ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ রাখতে বলছে। এ সময় যাত্রী নিয়ে আসা একটি মিশুক-রিকশার চাকার হাওয়া ছেড়ে দিচ্ছিলেন কয়েকজন মিলে।
অটোরিকশাচালকদের ভাষ্য, সিটি করপোরেশন অটোরিকশা চলাচলে ছয়টি সড়ক নির্ধারণ করে গরিবের পেটে লাথি দিতে চাইছে। সব সড়কে অটোরিকশা চলাচল না করলে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের চলাচলে ভোগান্তি বাড়বে। চালকেরা কষ্টে পড়বেন। সিটি করপোরেশন স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসা পর্যন্ত তাঁদের ধর্মঘট চলবে।
অটোরিকশাচালক মো. রুকন মিয়া বলেন, ‘আমরা কোনো নেতৃত্ব মেনে আন্দোলনে নামিনি, সবাই পেটের দায়ে নেমেছি। আমাদের আগের মতো গাড়ি চালাতে দিতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ধর্মঘট চলবে।’
অটোরিকশা না পেয়ে নগরের চরপাড়া এলাকা থেকে গাঙ্গিনারপাড় এলাকায় হেঁটে যাচ্ছিলেন নাজমুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ইজিবাইক চলাচল বন্ধ ও মিশুক-রিকশা চলাচলে বাধা দেওয়ায় আজ সকাল থেকে নগরে চলাচলকারী লোকজন ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। অনেকে বেশি ভাড়ায় রিকশা দিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন।
গত ১৯ জানুয়ারি সকাল ৬টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত নগরে অটোরিকশা চলাচল বন্ধ রেখে প্রতিবাদ সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রশাসনের কাছে তিন দফা দাবিসংবলিত স্মারকলিপি দেন চালকেরা। দাবিগুলোর মধ্যে ছিল—সিটি করপোরেশনের প্রতিটি সড়কে আগের মতো ইজিবাইক চলাচল করতে দিতে হবে, রোড মাফিক ইজিবাইক চলাচলের যে নীতিমালা করা হয়েছে, তা বাতিল করতে হবে। নতুন করে ময়মনসিংহ জেলা ইজিবাইক মালিক সমিতি ও ময়মনসিংহ জেলা ইজিবাইক শ্রমিক সমিতির অনুমোদন দিতে হবে। স্বাধীনভাবে এবং সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে ইজিবাইক মালিক ও শ্রমিকদের সংগঠন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সার্বিক সহযোগিতা করতে হবে।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সচিব সুমনা আল মজীদ বলেন, নগরের মানুষের সুবিধার কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ইজিবাইক চালকেরা তা মানতে না চাইলে তাঁদের নিয়ে বসতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের বৈধ প্রায় ছয় হাজার ইজিবাইকের মধ্যে পাঁচ হাজারের বেশি রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু অনেকে নিবন্ধনবিহীন অবৈধভাবে ইজিবাইক চালায়। মনে হচ্ছে, বিশৃঙ্খলা তারাই করছে।’
অটোরিকশা চলাচলের জন্য সিটি করপোরেশনের নির্ধারণ করে দেওয়া সড়কগুলোর মধ্যে আছে—শম্ভুগঞ্জ থেকে ম্যুরালসংলগ্ন নদীর পাড়ের রাস্তা ও টাউন হলে রহমতপুর পর্যন্ত। চরপাড়া মোড় ভায়া দিঘারকান্দা বাইপাস মোড় থেকে আকুয়া বাইপাস মোড় হয়ে রহমতপুর বাইপাস মোড় পর্যন্ত। বাদেকল্পা ভায়া সানকিপাড়া হয়ে বাউন্ডারি রোড দিয়ে পূরবী সিনেমা হল পর্যন্ত। খাগডহর ঘুন্টি ভায়া টাউন হল মোড় হয়ে জিলা স্কুল বাউন্ডারি রোড দিয়ে পূরবী সিনেমা হল পর্যন্ত। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রেললাইনের পাশের রাস্তা হয়ে তাজমহল স্টেশন পর্যন্ত। দাপুনিয়া থেকে জিলা স্কুল, টাউন হল মোড় হয়ে রহমতপুর পর্যন্ত।